শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ১০:৪১ অপরাহ্ন

লালমনিরহাটে ধুন্দল চাষে স্বাবলম্বী চাষীরা

লালমনিরহাট সংবাদদাতা / ১ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫

আগাম বর্ষাকালীন সবজি ধুন্দল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন লালমনিরহাটের সবজি চাষিরা। লালমনিরহাটে প্রায় ৪০টি গ্রামের কৃষকের প্রধান ফসল নানা জাতের সবজি। সবজি খ্যাত গ্রাম এর মধ্যে রয়েছে- শিয়ালখাওয়া, চাঁপারহাট, ভোটমারী, দৈখাওয়া, সিঙ্গিমারী, কুমড়িরহাট, চন্দনপাট, বড়কমলাবাড়ী, হাজীগঞ্জ, চণ্ডীমারি, কর্ণপুর, দুড়াকুটি, ফুলগাছ, কোদালখাতা, ভাটিবাড়ী, কাকেয়া টেপা, বনগ্রাম, শিবেরকুটি অন্যতম। এসব এলাকায় এখন ধুন্দল চাষ হচ্ছে। এছাড়াও লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই ছড়িয়ে আছে ধুন্দল ক্ষেত। এসব ক্ষেতের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে হলদে ফুল। সবুজ পাতা আর হলদে ফুলের মাঝে জড়িয়ে আছে ধুন্দল।
ধুন্দল বা ধুঁধুঁল বা ধুন্দুল হচ্ছে কিউকারবিটাসি (শসা লাউ) পরিবারের লাফা গণের বর্ষজীবী বিশাল আরোহী বীরুৎ। ঝিঙের মতো এরাও একই গণের উদ্ভিদ। তবে সব্জির থেকেও ধুন্দলের ছোবড়া বেশি বিখ্যাত।
ধুন্দল চাষ গ্রামবাসীর আত্মকর্মসংস্থানসহ অনেকের বাড়তি আয়ের উপায় হয়ে উঠেছে। এক সময় ঝোপঝাড়ে প্রাকৃতিক ভাবে ধুন্দল গাছ গজিয়ে উঠতো। আর সেখানে এখন বাণিজ্যিকভাবে ধুন্দলের চাষ হচ্ছে। এতে লালমনিরহাটের কৃষক পরিবার আর্থিভাবে লাভবান হচ্ছে। এলাকায় কমেছে বেকারত্ব।
লালমনিরহাট কৃষি বিভাগ ও চাষিদের সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়ন ও ২টি (লালমনিরহাট, পাটগ্রাম) পৌরসভা এলাকায় বহু বছর ধরেই ধুন্দল চাষ হচ্ছে। আগে কম চাষ হতো। প্রায় ১০বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে ধুন্দল চাষ শুরু করেন এলাকার সবজি চাষিরা। এবারও ধুন্দল চাষ হয়েছে। কম খরচে স্বল্প সময়ে ফলন অধিক হওয়ায় এখন এখানকার প্রায় অধিকাংশ পরিবার ধুন্দল চাষ করছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, লালমনিরহাটের যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই ছড়িয়ে আছে ধুন্দল ক্ষেত। কৃষকরা মাঠের পরিচর্যা করছেন। বিক্রয়ের জন্য ধুন্দল কাটছেন অনেকে। কেউ আগাছা পরিষ্কার করছেন। কেউবা আবার পোকামাকড় দমনের জন্য কৃটনাশক দিচ্ছেন। এক মুহুর্ত যেন দম ফেলার সময় নেই চাষিদের।
কৃষকেরা জানান, বীজ রোপণের ৫০ থেকে ৫৫দিন পর শুরু হয় ফসল তোলা। প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন মাস ফসল উৎপাদন করা যায়। আগাম তোলা ফসল ৪০ থেকে ৪৫টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে। এখন ২৫ থেকে ৩০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন চাষিরা ধুন্দল নিয়ে হাট-বাজারে যান। সেখানে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের কাছে ধুন্দল বিক্রি করেন। কোনো কোনো পাইকার ক্ষেত থেকেও ফসল নিয়ে যান। এক বিঘা ক্ষেতে প্রায় ৫০ মণ ধুন্দল ফলে। প্রতি বিঘা জমিতে ২০ থেকে ২৫হাজার টাকা খরচ এবং ৮০হাজার থেকে ১লাখ টাকা আয় হয়। অন্যান্য ফসলের তুলনায় ধুন্দলে রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম এবং চাষ লাভজনক হওয়ায় ধুন্দল চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেশি।
ফুলগাছ এলাকার ধুন্দল চাষী মোঃ আঞ্জু বলেন, আমি প্রতিনিয়ত সবজি ক্ষেত করে থাকি, বর্তমান অবস্থায় আমার অন্যান্য সবজির পাশাপাশি ধুন্দল ক্ষেতও আছে। আমি জৈব ও সামান্য রাসায়নিক সার প্রয়োগ করি আর নিজে পরিশ্রম করে এ সবজির চাষ করেছি। যা নিজের চাহিদা মিটিয়ে হাটে-বাজারেও বিক্রয় করে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছি।
কোদালখাতা গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আগে অল্প জমিতে ধুন্দল চাষ করতাম। এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করি।
কৃষক সাইফুল ইসলাম ও আইয়ুব আলী জানান, গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ কৃষি নির্ভর। ধুন্দল চাষ করে কম-বেশি সবাই লাভবান হয়েছেন। ধুন্দলে রোগবালাই কম হয়, তেমন কোনো সমস্যাও নেই। আগাম চাষের প্রথম দিকে পানির কিছুটা সংকট থাকে। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে সহযোগিতা করা হয়। তাদের পরামর্শ নিয়ে পোকা-মাকড় দমনের জন্য কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। গত বছরের চেয়ে এবার বেশি জায়গায় ধুন্দল চাষ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। ভালো দাম পাচ্ছি। আশা করছি গত বছরের চেয়ে এবার লাভ বেশি হবে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অপূর্ব বলেন, ব্যাপক জমিতে ধুন্দল চাষ হয়। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ধুন্দল চাষের প্রসার ঘটে এখানে। এখন প্রায়ই সব পরিবারই ধুন্দল চাষের সঙ্গে যুক্ত। চাষিরা জমি ফেলে রাখতেন। এখন সেই জমিতে ধুন্দল চাষ করে লাভবান তারা। জেলার কৃষকদের আয়ের প্রধান উৎস এখন সবজি চাষ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ