শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ০৯:৪৪ অপরাহ্ন

বদরগঞ্জে সরকারি ১৮৩ বস্তা চাল উদ্ধার, অভিযুক্তই তদন্তকারী কর্মকর্তা !

এম. এ আপন / ১৩ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫

রংপুরের বদরগঞ্জের সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে রাতের অন্ধকারে পাচার হওয়া ১৫৬বস্তা (প্রতি বস্তা ৩০ কেজি) চাল একটি গদিঘরের উঠান থেকে উদ্ধার করেছেন ইউএনও মিজানুর রহমান। পরেরদিন আবার ইউএনও ওই গদিঘরে অভিযান চালিয়ে সরকারি খাদ্যগুদামের সীলমোহরযুক্ত ২৭ বস্তা চাল উদ্ধার করেন। পরে চালগুলো সরকারি খাদ্যগুদামে রাখা হয়। ঘটনার দুইদিন অতিবাহিত হলেও রহস্যজনক কারণে এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়নি। ঘটনাটির তদন্ত করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিপ্লব কুমার সিংকে। তবে চাল পাচারের সঙ্গে খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জড়িত আছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার তাঁদেরকে দিয়ে তদন্ত করায় দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বদরগঞ্জ সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে এক ট্রলি সরকারি চাল মধুপুর ইউনিয়নের বোর্ডঘরা এলাকায় বাপ্পি সাহা তাঁর ব্যক্তিগত গদিঘরে রাখচ্ছিলেন। এ সময় এলাকার মানুষ ট্রলিসহ চালের বস্তা আটক করে ইউএনওকে খবর দেন। ইউএনও ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে গদিঘরের উঠানে ট্রলিতে রাখা সরকারি খাদ্যগুদামের সীলমোহরযুক্ত ১৫৬বস্তা চাল উদ্ধার করে তাঁর কার্যালয়ে নেন। পরেরদিন বুধবার বিকেলে আবার ইউএনও ওই গুদামে অভিযান চালিয়ে ২৭ বস্তা চাল উদ্ধার করেন। পরে দু’দিনের উদ্ধার করা ১৮৩ বস্তা চাল সরকারি খাদ্যগুদামে রাখেন।
তবে ওই চাল নিয়ে অভিযোগ উঠেছে দুই ধরণের। কেউ বলছেন, গুদামের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজস করে বাপ্পি সাহা সরকারি গুদামে নিম্নমানের চাল দিয়ে গুদামের ভালো চাল নিয়ে যান। এ ধরণের ব্যবসা তিনি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন। আবার কেউ বলছেন, উপজেলায় ভিডব্লিউবি কর্মসূচির পাঁচ মাসের চাল ১০ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা বিতরণের জন্যসরকারি গুদাম থেকে তুলছেন। সেখান থেকে কোনো চেয়ারম্যান চাল তুলে অসৎ উদ্দেশ্যে পরিষদে না নিয়ে বাপ্পি সাহার কাছে বিক্রি করেছেন।
তবে চাল উদ্ধারের পর ইউএনও মিজানুর রহমান ঘটনাটির তদন্তের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিপ্লব কুমার সিংকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘খাদ্যনিয়ন্ত্রক চাইবেন না তদন্তে সঠিকটা বেরিয়ে আসুক। কারণ সঠিক বিষয়টি বেরিয়ে আসলে ওই ব্যবসায়ীর আগে তিনি (খাদ্যনিয়ন্ত্রক) ও সরকারি গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ধরা খাবেন। এ কারণে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নয়-ছয়ভাবে তদন্ত করে বলবেন ওই চাল সরকারি নয়।’ আরেক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রশাসন সরকারি চাল উদ্ধার করেছেন, বিধি মোতাবেক মামলা করবেন, আদালতে প্রমাণিত হবে ওই চাল কোথায় পেয়েছেন ব্যবসায়ী ।’ তবে চাল ব্যবসায়ী বাপ্পী সাহার সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয় তিনি অসুস্থ, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
তবে গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) রায়হান কবির বলেন, ‘সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছি। আমি ওই ব্যবাসয়ীকে কোনো গুদাম থেকে চাল দেইনি। এখানে ওইদিন গুদাম থেকে বেশ কিছু ইউপি চেয়ারম্যান চাল তুলে নিয়ে গেছেন। যদি বাইরে কেউ ওই ব্যবসায়ীকে চাল দিয়ে থাকেন, এর দায় তাঁকেই দিতে হবে।’
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিপ্লব কুমার সিং বলেন, ‘আমি কিছুটা তদন্ত করেছি, ওই চাল সরকারি মনে হচ্ছে না। ওই ব্যবসায়ী মিল পার্টনার, তাঁর কাছে সরকারি সিলমোহরযুক্ত বস্তায় চাল থাকতেই পারে। তবে ওই ব্যবসায়ী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় এখনও তাঁর বক্তব্য নিতে পারিনি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইউএনও জনগনের কথায় চাল আটক করেছেন। তবে আমি সঠিক তদন্তই করে প্রতিবেদন জমা দিব।’ মামলা না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চাল তো আমি আটক করিনি।’
তবে ইউএনও মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ওই ঘটনায় মামলা করার নির্দেশ দিয়েছি খাদ্যনিয়ন্ত্রককে। তিনি এখনও কেন মামলা করেননি তা দেখছি।’
উল্লেখ, এর আগেও ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বদরগঞ্জ সরকারি গুদাম থেকে ১৬ মেট্রিকটন সরকারি চাল পাচার করে বাপ্পী সাহার ওই গদি ঘরে রাখা হয়েছিল। ওই সময়ে স্থানীয় সাংবাদিকেরা বিষয়টি জানতে পারলে তৎকালীন সরকারি গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম ঘটনাটি ধামা-চাপা দেন। এ নিয়ে ওই সালের ২৮ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘১৬ মেট্রিকটন চাল পাচার’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে আশরাফুল ইসলামকে ওসিএলএসডি কার্যালয় থেকে তুলে নেওয়া হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ