গত চারদিন থেকে টানা ভারী বৃষ্টি ও ভারতীয় আসাম রাজ্যের পাহাড়ি ঢল মানকারচর কালো নদী দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা জিঞ্জিরাম নদী দিয়ে নেমে আসায় কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার রৌমারী সদর, যাদুরচর ও চর শৌলমারী ও শৌলমারী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে করে প্রায় দেড়শতাধিক হেক্টর জমির পাঁকা বোরাধান, আউস, পাট, কাউন ও শাকসবজি ডুবে গেছে। শ্রমিক সংকট ও ১২’শ টাকা দিনমুজুরী হওয়ায় ধান কাটতে হিশশিম খাচ্ছে কৃষকরা। পাকা ধান ডুবে যাওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। এতো কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে না পারায় কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঝাউবাড়ি, লাঠিয়ালডাঙ্গা, চুলিয়ারচর, বারবান্দা, পূর্বইজলামারী, ভুন্দুরচর, চান্দারচর, মোলাøারচর, বেহুলারচর, খেতারচর, বড়াইবাড়ি সহ কয়েকটি গ্রাম এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করে। বন্যার পানি ও ভারী বৃষ্টি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি হওয়ায় জিঞ্জিরাম নদী উপচে গিয়ে ওইসব এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।
সীমান্ত ঘেঁষা আলগার চর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, এনজিও থেকে লোন নিয়ে অনেক কষ্ট করে এক একর জমিতে ইরি ধানের আবাদ করেছি। আশা ছিল, এবার অনেক ধান ঘরে তুলতে পারবো কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।
খেওয়ার চর গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান জানান, আমি দুই বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছি। প্রতি বছর এই ধান দিয়ে আমার সংসার চলে। অন্য বছরের চেয়ে এবার বেশি বৃষ্টি হওয়ায় খালে পানি জমেছে। তাই, পাকা ধান সব তলে গেছে।
রৌমারী সদর ইউপি সদস্য রুহুল আমিন বলেন, কয়েকদিনের টানা বর্ষন ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে আমার এলাকার চর নতুনবন্দর, ভুন্দুর চর, পূর্ব ইৎলামারী ও নামা বারবান্দা সহ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ওই এলাকার মানুষ বর্তমানে নৌকা ও ভেলা দিয়ে পারাপার হচ্ছে।
রৌমারী সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক জানান, কয়েকদিনের টানা বর্ষনে আমার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। সেই সাথে কৃষকের ইরি ধান পানিতে ডুবে গেছে। এ অবস্থা থাকলে পরিস্থিতি আরোও খারাপের দিকে যাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী জানান, চলতি মৌসুমে দশ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ হয়েছে। এবছর বোরো ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্ত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ও পাহাড়ি ঢলে সীমান্তঘেষা বিভিন্ন খাল-বিলে ও নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে ক্ষতি সাাধিত হয়েছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বোরাধান, আউস ধান, পাট, শাকসবজি, কাউন ও তিলসহ ৮৫ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে আংশিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভনা রয়েছে। তবে দ্রুত পানি শুকিয়ে গেলে তেমন একটা ক্ষতি হবে।