শিরোনাম
শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০২:৫১ পূর্বাহ্ন

রংপুরের বিনোদন কেন্দ্রেগুলোতে উপচে পড়া ভিড়

ডেস্ক নিউজ / ৪৬ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বুধবার, ২ এপ্রিল, ২০২৫

ঈদ পরবর্তী রংপুরের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে কাটছে হইচই আর আনন্দমুখর পরিবেশে।দর্শনীয় স্থান, বিনোদনকেন্দ্র ও পার্কগুলো এখন লোকে লোকারণ্য। মঙ্গলবা ও বুধবার সকাল থেকে দর্শনীয় স্থান, সিনেমাহল, সাংস্কৃতিক অঙ্গন, বিনোদন কেন্দ্র ও শিশু পার্কগুলো ঘুরে বিভিন্ন বয়সী মানুষের ঢল দেখা গেছে। ঈদ আনন্দে মাতোয়ারা শিশু-কিশোরদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। সবার চোখে-মুখে আনন্দ উচ্ছাসের ছাপ। বিশেষ করে শিশুদের উচ্ছ্বাস সবচেয়ে বেশি। শিশু-কিশোরদের সঙ্গে ঈদের আনন্দে বেরিয়েছেন অভিভাবকরাও।

দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ রংপুর চিড়িয়াখানা বিনোদন উদ্যানসহ রংপুর শিশুপার্ক, তাজহাট জমিদার বাড়ি ও জাদুঘর, সিটি চিকলি বিনোদন পার্ক, প্রয়াস সেনাপার্ক, ভিন্নজগত ,চিকলি ওয়াটার পার্ক ও রূপকথা থিম পার্কে টিকিটের জন্য দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন দেখা যায়। টিকিট কেটে প্রবেশ করতেও যেন রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে বিনোদনপ্রেমীদের।

 

এছাড়াও রংপুর নগরীর কালেক্টরেট সুরভি উদ্যান, টাউন হল চত্বর, ডিসির মোড়. কাউনিয়ার শতবর্ষী তিস্তা রেলওয়ে সেতু, গঙ্গাচড়া মহিপুর তিস্তা সড়ক সেতু পয়েন্টসহ রংপুর জিলা স্কুল মাঠ, বৈশাখী বটতলা, ক্যান্ট পাবলিক কলেজ সংলগ্ন ফ্লাইওভার, আরএএমসি চত্বর, পায়রা চত্বরসহ নগরীর দর্শনীয় স্থানজুড়ে এখন মানুষ আর মানুষ। এসব স্থানে যেতে দীর্ঘ যানজটে পড়েছেন বিনোদনপ্রেমীরা।

 

রংপুর চিড়িয়াখানায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে কিছু বন্যপ্রাণীর সংযোজন শিশু কিশোরদের উপস্থিতিতি বাড়িয়েছে। চিড়িয়াখানা ভেতরে প্রবেশের পর এক খাঁচা থেকে আরেক খাঁচায় হেঁটে দর্শনার্থীরা বিভিন্ন পশু-পাখি দেখছেন। আর বড়রা তাদের শিশুসন্তানকে বিভিন্ন পশুপাখির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। বেশি ভিড় লক্ষ করা গেছে সিংহের খাঁচার সামনে। পশুর রাজাকে দেখে শিশুরাও বেশ খুশি। বানরের ভেংচি কাটা আর লাফালাফি দেখতে বানরের খাঁচার সামনেও ছিল দর্শনার্থীর ভিড়। এছাড়া কুমির, ঘড়িয়াল, জলহস্তি, ঘোড়া, হনুমান, গাধা, ভাল্লুক, হরিণ, ময়ূর, উটপাখিসহ চিড়িয়াখানার সবগুলো খাঁচার সামনেই ছিল জটলা।

চিড়িয়াখানায় রয়েছে আলাদা শিশুপার্ক। কয়েকবছর থেকে শিশুপার্কের পরিধি বাড়ায় টিকিট নিয়ে প্রবেশ করতে লম্বা লাইন দেখা গেছে। পার্কের ভেতরে দলবদ্ধভাবে ঘুরছিল শিশু বারবি আয়াত, মাহির, জাওয়াদ, মুইজ, জোবায়ের করিম, সুবহা মনিসহ কয়েকজন। তাদের মধ্যে কথা হয় জোবায়ের করিমের সঙ্গে। জোবায়ের জানায় আনন্দ ও মজা পেয়েছে তারা। তবে শিশু পার্কের রাইডগুলোর আসন ফাঁকা নেই, সবখানে ভিড় আর ভিড়। যার কারণে খুব উঠতে পারছেন না শিশুরা। গতবারের মতো এবারও বাড়তি আনন্দ যোগ করেছে রোস্টারে। সেইসঙ্গে গ্রামীণ চিত্রের অবয়ব ছবি তোলা আর আড্ডা দেওয়া সব মিলিয়ে আনন্দ বেড়েছে কয়েকগুন। আই লাভ প্রতিক জড়িয়ে ছবি তোলার হুড়োহুড়ি দেখা গেছে। ভয় আর রোমাঞ্চের জন্য ভুতের ঘরসংসার রয়েছে। যেখানে অনেকের প্রবেশে ভয় কাজ করলেও ভালোই শিহরণ জাগায় বলে জানিয়েছে একাধিক শিশু-কিশোর।

অন্যদিকে রংপুর সিটি করপোরেশন দ্বারা পরিচালিত রংপুর সিটি চিকলি বিনোদন পার্ক সাজানো হয়েছে শিশু-কিশোরদের আকৃষ্ট করার মতো নানা আয়োজন। বিলের বুকে স্পিডবোট চলছে দ্রুত বেগে এ পাশ থেকে ওপাশ। হই হুল্লোড়ে মেতে উঠছে সবাই। আর স্পিডবোটের ছুটে চলার বেগে বড় বড় ঢেউ এসে ধাক্কা দিচ্ছে বিলের দুই কূলে। ছিটকে আসা জলরাশিতে মজা করছেন ছোট-বড় সব বয়সী মানুষ। এই পার্কের বিপরীতে ইসলামপুর (হনুমানতলা) রোডে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন চিকলি ওয়াটার পার্ক। সেখানে উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা গেছে। বিলের পানির মধ্যে তৈরি হয়েছে নানা ধরণের রাইড। কৃত্তিম পাহাড়ি ঝর্ণাধারা। পার্কে বসার চেয়ারগুলো ওয়েষ্টান প্যাটানের হওয়ায় বসার আগ্রহ দেখা গেছে। সবমিলিয়ে ওয়াটার পার্কে রংপুর জেলার বাইরের জেলা থেকে এসেছেন বিনোদনপ্রেমীরা।

একই চিত্র দেখা গেছে রংপুর নগরী থেকে একটু দূরের খলেয়া গঞ্জিপুরের ভিন্নজগত, পীরগঞ্জের আনন্দনগর, বদরগঞ্জের মায়াভুবন, কাউনিয়ার তিস্তা পার্ক, পীরগাছার আলী বাবা থিম পার্কেও। ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের মাঝে ঈদ উদযাপনের খোরাক যোগাচ্ছে এসব বিনোদনকেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থান।

রংপুরের বদরগঞ্জ রোডে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত নিসবেতগঞ্জের রক্ত গৌরব চত্বর এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক। ঘাঘট নদীর অংশ বিশেষসহ পার্শ্ববর্তী বিস্তৃত নিচু এলাকায় সবুজে সাজানো এই বিশাল পার্কের পরিবেশ কোলাহলমুক্ত। এ পার্কটি সেনা সদস্যদের নিখুঁত কারিগরি পরিকল্পনায় বাঁশ ব্যবহার করে সাজানো হয়েছে। পার্কসহ ঘাঘটের আশপাশ ঘুরে দেখতে সেখানে ভিড় করছে বিনোদন পিপাসুরা।

রংপুর নগরী থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে কাউনিয়া তিস্তা রেলসেতু। এটি জেলার শতবর্ষী একটি পুরাতন রেলসেতু। তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত এই রেলওয়ে সেতুর পাশে ২০১২ সালে তিস্তা সড়ক সেতু তৈরি করা হয়েছে। গোধূলীবেলার মায়াবী সৌন্দর্যে মুগ্ধ দর্শনার্থীদের আড্ডার আসর জমছে তিস্তাপাড়ে। তিস্তা বাজার সড়কে নজর কাড়ছে দৃষ্টিনন্দন তিস্তাপার্ক। নদীময় প্রকৃতিতে স্বস্তির বিনোদন পেতে এখানে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের মানুষের আগানোগা বেড়েছে কয়েকগুন।

একই চিত্র দেখা গেছে গঙ্গাচড়ার মহিপুর ঘাটে। তিস্তা নদীবেষ্টিত এই ঘাটে রংপুর-লালমনিরহাট জেলার মানুষের পারাপারে নির্মিত তিস্তা সড়ক সেতু। এই সেতুর নিচের একপ্রান্তে পানিতে ছুটে বেড়াচ্ছে নৌকা আর ছোট ছোট স্পিডবোট। সেতুর আরেকপ্রান্তে বিশাল বালুচর। মনোরম পরিবেশে নদীর বুকে পাল তোলা নৌকায় উঠে ঘুরছে অনেকেই। আবার কেউ কেউ ধুধু বালুচরে প্রিয়জনের হাত ধরে হেঁটে হেঁটে গল্প করে সময় কাটাচ্ছেন। এখানে সেতুর দুই প্রান্তে একটি ভাসমান ও অভিজাত রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে মুখরোচক বাহারি খাবারের দোকানে ভিড় দেখা গেছে ভোজন রসিকদের।

রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. মো. আমবার আলী তালুকদার জানান, গত কয়েকবছর থেকে এবারে দর্শনার্থী বেশি লক্ষ করা গেছে। সবাই আনন্দ চিত্তে ফুরফুরে মেজাজে চিড়িয়াখানা ঘুরছেন, শিশুরা খুবেই আনন্দ উচ্ছাসে সময় কাটাচ্ছেন। বিনোদনপ্রেমীদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে পুলিশ সার্বক্ষণিক রয়েছে। তাছাড়া পুরো চিড়িয়াখানা সিসি ক্যামেরার আও-তাভুক্ত।

রংপুর জেলা পুলিশ সুপার আবু সাইম জানান,জেলার সরকারী-বেসরকারী সকল বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা রয়েছে।

রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, ঈদে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে রেজুলেশন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে আসা জেলা এবং বাহিরের কেউ নিরাপত্তার অভাব ফিল না করে। সে জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী জানান, রংপুর নগরীর প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি বিনোদনকেন্দ্রে পুরুষ পুলিশের পাশাপাশি মহিলা পুলিশ সদস্যদের রাখা হয়েছে


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ