গাইবান্ধা জেলা নিভৃত অঞ্চলের মাঠজুড়ে দুলছিল বোরো ধানখেত। কৃষকরা মনের আনন্দে শুরু করছিলেন কাটা-মাড়াই। এরই মধ্যে অব্যাহত ঝড়-বৃষ্টি। আবহাওয়ার বিরূপ আচরণে নিম্নাঞ্চলের ধানখেত তলিয়েছে পানির নিচে। কারও কারও উঠোনে পড়ে আছে কেটে আনা ধান। এই ফসলের ক্ষতির আশঙ্কায় মলিন হয়েছে তাদের সেই আনন্দ। এখন প্রান্তিক কৃষকদের চোখেমুখে বোবা কান্নার দৃশ্য!
গতকাল বুধবার সরেজমিনে গাইবান্ধার সাতটি উপজেলার প্রত্যান্ত এলাকায় দেখা গেছে, বোরো চাষিদের আহাজারির চিত্র। টানা বর্ষণের কবলে অনেকে পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন না। আবার কেউবা কেটে আনলেও তা মাড়াই করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে- চলতি বোরো মৌসুমে গাইবান্ধা জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছেড়ে ১ লাখ ২৯ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে ধানা আবাদ হয়েছে। এ থেকে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান ঘরে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, গত কয়েকদিন ধরে দিনেরাতে আচমকাই শুরু হয় ঝড়-বৃষ্টিপাত। প্রতিনিয়ত থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে নিচু ভূমির পাকা ধানখেত গলা পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। এছাড়া নুয়ে পড়ছে পানির ওপরে। এর আগে কিছু সংখ্যক কৃষক জমির ধান কেটে বাড়িতে আনলেও সেগুলোর মাড়াই ও শুকানোর কাজ ঠিকমত করতে পারছেন না। অব্যাহত ঝড়ে খেতে শীষ থেকে ঝড়ে যাচ্ছে ধান। আবার কেটে বাড়ি নিয়ে আসলেও সঠিক সময়ে মাড়াই-পরিষ্কার ও শুকাতে না পারায় উঠোনেই পড়ে থাকা ধানগুলোতে গজাচ্ছে গাছ। ফলে উভয় সংকটে চরম উদ্বিগ্ন কৃষকরা।
মিনহাজ মিয়া নামের এক কৃষক জানান, দেড় একর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। গেল বছরের তুলনায় ধানের ফলন ভালো হয়। আশা করছিলেন খরচ বাদে বেশ লাভবান হবেন। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ার কারণে সংসয়ে আছেন।
কৃষক জহির উদ্দিন বলেন, ‘একটা সমিতি থেকে লোন নিয়্যা মুই এবার দুইবিঘাত ধান আবাদ করছোম। জমিত ইগলা ধান পাকিয়া সুন্দুর হচিলো। অল্পেঅ্যানা ধান কাটি বাড়িত আনার সাথে সেদিন থেকে ঝড়ি-বাতাস শুরু হচে। আরও মেলা ধান জমিত আছে। সিগল্যা আবার পানিতে তলে গেছে। একন বুঝিল ধানগুলা নষ্ট হয় বাহে’।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রাসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম জানান, ঝড়-বৃষ্টিপাতে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষায় বোরো ধান ৮০ ভাগ পরিপক্ক হলেই কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। দুই-একদিন বৃষ্টি না হলে কৃষকের কোন ক্ষতি হবে না।